অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন ও দেশ সম্পর্কে জানুন - পর্যটনবিডি.কম
Description AboutTourism or Parjatan Place of Sylhet
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুারিষ্ট বা পর্যটক সিলেট জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুল ভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছে যার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহী হয়ে উঠবে।
সিলেট শহর ভ্রমণের শুরুটা হতে পারে এ স্থান থেকেই । শহরের কোর্ট পয়েন্ট থেকে উত্তরে জিন্দাবাজার ছড়িয়ে চৌহাট্টা থেকে কিছুটা উত্তরে বাঁ দিকে এ মাজারের প্রবেশপথ। এখান থেকে একটু ভেতরে হেঁটে গেলেই মূল মাজার কমপ্লেক্স। প্রথমেই চোখে পড়বে দরগাহ মসজিদ। মসজিদটি বর্তমানে আধুনিক রূপ নিলে ও প্রথমে এটি তৈরি হয়েছিল ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে।
মসজিদের পঁাশেই রয়েছে মাজারে ওঠার সিঁড়ি। উপরে উঠে মাজারে প্রবেশ করতে হয় গম্বুজ বিশিষ্ট একটি হলঘরের মধ্য দিয়ে।এই হল ঘরের ঠিক পশ্চিমের ভবনটি ঘড়িঘর। ঘড়িঘরের আঙ্গিনার পূর্ব দিকে যে তিনটি কবর রয়েছে তা হজরত শাহজালালের ঘনিষ্ঠ তিন জনসঙ্গীর। এর দক্ষিণ পাশে গ্রিলঘেরা ছোট্ট ঘরটি হজরত শাহজালালের চিল্লাখানা। দু ফুট চওড়া এ চিল্লাখানায় তিনি জীবনের তেইশটি বছর ধ্যানমগ্ন কাটিয়েছেন। চিল্লা খানার উত্তরের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে উঁচু ইটে বাঁধানো হজরত শাহজালাল(র.) এর মাজার। এ মাজারটি নির্মাণ করা হয় ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে। এরপাশেই রয়েছে ইয়েমেনের রাজা শাহজাদ আলীর কবর ১৪১০ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের শাসনকর্তা মুক্তালিব খান উজিরের কবর।এ মাজারে প্রাপ্ত শিলা লিপি থেকে জানাযায়, সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের শাসন আমলে ১৩০৩ সালে হজরত শাহজালালের হাতে এ অঞ্চল বিজিত হয়। তিনি হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দকে পরাজিত করে অঞ্চলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।সে সময়ে তুরস্কের কুনিয়া শহর থেকে তিনি ৩১৩ জন শিষ্যসহ এদেশে আসেন। বহু যুদ্ধে বিজয়ের পর এখানেই তিনি থেকে যান। ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। হজরত শাহজালালের পুরো মাজার কমপ্লেক্সটি ঘুরে দেখার মতো জায়গা। মাজারের পুকুরের বহুকালের ঐতিহ্য গজার মাছ আর শত শত জালালী কবুতরের ডানা মেলার শব্দে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। মাজার কমপ্লেক্সের ভেতরে এখনো রক্ষিত আছে হজরত শাহাজালালের (র.) ব্যবহৃত তলোয়ার, প্লেট, বাটি ইত্যাদি। মাজার কমপ্লেক্সের নবনির্মিত তোরণটিও বেশ আকর্ষণীয়।
হজরত শাহপরান ছিলেন হজরত শাহজালালের ভাগ্নে। তিনিও ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি। শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্বদিকে দক্ষিণগাছের খাদিমপাড়ায় রয়েছে এই মহান ব্যক্তির মাজার। বিশাল বটগাছের ছায়াতলে এ মাজারে উঠতে হয় সিঁড়ি বেয়ে। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্তের পদচারণায় মুখরিত থাকে পুরো মাজার এলাকা। মাজারের পাশেই রয়েছে মুঘল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ।
লাকাতুরা চা বাগান ছেড়ে বিমানবন্দরের দিকে একটু এগুলেই হাতের বাম পাশে সুন্দর এ চা বাগানটির অবস্থান। এটিকে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো চা বাগান। ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের হাত ধরে ১৮৫৪ সালে এ চা বাগানের প্রতিষ্ঠা। মালনিছড়া চা বাগানের ভেতরে ঘুরে বেড়ানোর মজাটাই আলাদা। অনুমতি নিয়ে চা বাগানের কোনো কর্মচারীর সহায়তায় ঘুরে দেখা যেতে পারে বাগানটি। মালনিছড়া চা বাগানের মধ্যে একটি কমলালেবুর বাগানও আছে।
মালনিছড়া থেকে কিছুদূর সামনে ক্যাডেট কলেজ ছাড়িয়ে রয়েছে হাতের ডানপাশে পাহাড়ি টিলার উপরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ভ্রমণ কেন্দ্র। বেড়ানোর জন্য এ জায়গাটি ও চমৎকার এ জায়গাটিতে বসে দূর পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সিলেটের মোটেলটি এখানেই।
হজরত শাহজালালের সমাধি থেকে ২৫-৩০ টাকা রিকশা ভাড়ার দূরত্বের কিনব্রিজ। সুরমাব্রিজ নামেও এটি বেশ পরিচিত। ১৯৩৬ সালে নির্মাণ করা হয় এটি। তৎকালীন ইংরেজ গভর্নর মাইকেল কিনের নামেই এর নামকরণ হয়। ১১৫০ ফিট লম্বা এবং ১৮ ফিট প্রস্থ এ ব্রিজটি দেখতে ধনুকের মতো বাঁকানো। ১৯৭১ সালে পাক হানাদাররা ব্রিজটির একাংশ উড়িয়ে দেয়। পরে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের অর্থায়নে বিধ্বস্ত অংশটির পুননির্মাণ করা হয়।
কিনব্রিজ থেকে নিচে তাকালেই চোখে পড়ে একটি ঘড়িঘর। ব্রিজের পাশে চাঁদনীঘাটে অবস্থিত এ ঘড়িঘরটি আজো দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। জানা যায় পৃথ্বিমপাশার বিখ্যাত জমিদার আলী আমজাদ খাঁ দিল্লির চাঁদনীচকে শাহজাদি জাহানারা কর্তৃক নির্মিত ঘড়িঘর দেখে মুগ্ধ হন। তাই তিনি সুরমা নুদীর তীরে চাঁদনীঘাটের কাছে অনুরূপ একটি ঘড়িঘর নির্মাণ করেন। এজন্যই সবাই একে জানেন আলী আমজাদের ঘরিঘর নামে।
সিলেটের মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত প্রাচীন স্থাপনা মণিপুরি রাজবাড়ি। মণিপুরি রাজা গম্ভীর সিংহের স্মৃতিবিজড়িত এ বাড়িতে গেলে দেখা মিলবে প্রাচীন ফটক ও রাজবাড়ি, কারুকার্যময় সিঁড়ি। মণিপুরি ঠাকুর ও ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্যরা বংশপরম্পরায় এ বাড়িতে বসবাস করছেন।
সিলেট শহরে অবস্থিত প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুরারীচাঁদ কলেজ বাঁ দিলেট এমসি কলেজ। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটি এ অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে।
সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টের কাছে নাইওরপুলে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানীর বাসভবন ‘নূর মঞ্জিল’। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনায় এ ঘরই ওখান ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর। এ জাদুঘর খোলা থাকে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সকাল ১০.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫.৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং অক্টোবর থেকে মার্চ সকাল ৯.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত। শুক্রবার খোলা থাকে বিকাল ৩.৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিট পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে ওসমানী স্মৃতিজাদুঘর বন্ধ থাকে। এ জাদুঘরের কোনো প্রবেশমূল্য নেই।
সিলেট থেকে জাফলং যাবার পথে জৈন্তাপুরে রয়েছে জৈন্তা রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। জৈন্তা রাজ্যের রাজধানী ছিল এ জায়গাটিতে। এ রাজ্যের শেষ রাজা ছিলেন রাজেন্দ্র সিংহ। ১৮৩৫ সালে ইংরেজরা এ রাজ্য দখল করে নেয়। বর্তমানে এখানে জৈন্তা রাজবাড়ির কয়েকটি ভাঙা দেয়াল ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই।
সিলেট শহর থেকে জাফলঙের দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের কোলে মনোরম এ জায়গাটি। জাফলং যেতে পথে পড়বে জৈন্তা রাজবাড়ি, তামাবিল, শ্রীপুর। তামাবিলে রয়েছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলবন্দর। তামাবিল থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পরেই রয়েছে জাফলং পর্যটন কেন্দ্র। অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলন আর পাথর ভাঙার ফলে এখন আর আগের সৌন্দর্য দেখা যায় না জাফলঙে।
খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে স্বছ জলের নদী সারি। খাসিয়া জৈন্তায়া পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে এ নদী মিশেছে সুরমার সঙ্গে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিচ্ছেদ রচনাও করেছে এ নদী। জাফলঙের ওপারেই দেখা যায় ভারতের মধ্যে বিচ্ছেদ রচনাও করেছে এ নদী। জাফলঙের ওপারেই দেখা যায় ভারতের ডাউকি বন্দর। ডাউকি থেকে শিলং খুবই কাছে।
মাত্র ৪০ কিলোমিটার রাস্তা। ডাউকি বন্দরের পাশেই রয়েছে উঁচু দুই পাহাড়ের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ঝুলন্ত ব্রিজ। কয়েক বছর আগে পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর ব্রিজটি আরো পেছনে নিয়ে যাওয়ায় জাফলঙে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের সঙ্গে ঝুলন্ত ব্রিজের আগেকার দৃশ্য এখন ভালোভাবে দেখা মেলে না। তবে নদী পেরিয়ে সামনে গেলে ব্রিজ আর ডাউকি বন্দর দেখা যায় ভালোভাবে। জাফলং বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাবেন খাসিয়াদের বিচিত্র জীবনচিত্র। জাফলং মূল পর্যটন কেন্দ্র থেকে নদী পার হয়ে পশ্চিমে ওপারে গেলেই পাওয়া যাবে আদিবাসী সম্প্রদায় খাসিয়াদের গ্রাম সংগ্রাম পুঞ্জি। সিলেট থেকে সকালে গিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসা যায় । সিলেট থেকে জাফলং যাওয়া যায় বাসে। তবে রিজার্ভ মাইক্রোবাস কিংবা বেবিট্যাক্সি ন
সিলেট শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের গোপালগঞ্জে ঢাকাদক্ষিণ গ্রামে রয়েছে চৈতন্যদেবের মন্দির। সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে সিংহদ্বার পেরিয়ে ভেতরে গেলে পাশাপাশি পাঁচটি মন্দির রয়েছে।
মণিপুরি জাদুঘর
শহরের সুবিদবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ জাদুঘর। বৃহত্তর দিলেট অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায় মণিপুরিদের শত বছরের কৃষ্টি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরের মাধ্যমে। এ জাদুঘরে দেখা মিলবে কয়েকশ বছরের পুরোনো ঘন্টা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত নানান দ্রব্যসামগ্রী, যুদ্ধে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পসামগ্রীসহ আরো অনেক কিছু।
শ্রী চৈতন্যদেবের মন্দিরের কাছেই ভাদেশ্বরে রয়েছে হজরত শাহ বাহাউদ্দীনের দরগা। হিজরি ৭০৭-৭০৮ সালে বাগদাদ হতে এ এলাকায় আসেন তিনি। এখানে তাঁর সমাধি ছাড়াও আছে একটি প্রাচীন মসজিদ ও পুকুর। পুকুরে আছে প্রচুর গজার মাছ। এ ছাড়া এখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে আছে কৈলাসটিলা গ্যাসফিল্ড। সিলেট শহরের কদমতলী থেকে বাসে যাওয়া যাবে জায়গাটিতে।